আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বন্দরের উত্তর লক্ষণখোলা এলাকার জ্বালানী তেল চোর চক্রের হোতা আক্তার ওরফে আক্তার মাঝি। দূর্ধর্ষ আক্তার ও তার ভাই জুবায়েরের নেতৃত্বে প্রতি রাতেই হচ্ছে ট্যাংকার থেকে মূল্যবান জ্বালানী তেল চুরি। দুই বছর আগে বিপুল পরিমাণ চোরাই জ্বালানী তেলসহ লক্ষণখোলা থেকে আক্তারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১১।
সম্প্রতি তার চোরাই তেলের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে চোরাই জ্বালানী তেলসহ তার সহযোগী সাইফুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু কারাগার থেকে বেরিয়ে আবারও তেল চুরিতে নামে আক্তার। সম্প্রতি এ নিয়ে জাতীয় এবং স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে আক্তার।
বর্তমানে এক প্রকার প্রকাশ্যেই চলছে তার তেল চুরি। তেল চোর আক্তার ঢাকেশ্বরী খেয়াঘাটের একজন মাঝি। মাত্র ৮ বছর আগে যার চাল আনতে ছিল পান্তা ফুরাবার অবস্থা। মাত্র ৪ বছর আগে মাথা গোঁজার ঠাঁই (বসত ভিটে) বলতে ছিল এক শতক জায়গার উপর ছনের একটি ডেরা। মাত্র ৪ বছরে তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় কিনেছেন ৭ টি বাড়ি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা। এলাকাবাসী জানান, রাত নামলেই ছেলে জুবায়েরকে নিয়ে নেমে পড়েন পদ্মা ডিপোর তেল চুরিতে। মূল্যবান জ্বালানী তেল চুরি করেই তিনি এখন মাঝি থেকে কোটিপতি।
বন্দরের ঢাকেশ্বরী খেয়াঘাটের মাঝি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ডের উত্তর লক্ষণখোলা এলাকার ইমান সর্দারের ছেলে আক্তার(৪৮) ও তার ছেলে জুবায়ের আলম পদ্মা ডিপোর চোরাই তেল বিক্রি করে ইতোমধ্যে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। গত বছরের ২৭ আগষ্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আক্তারের উত্তর লক্ষণখোলার চোরাই জ্বালানী তেলের আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব।
এ সময় বিপুল পরিমাণ চোরাই জ্বালানী তেলসহ আক্তারকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর দীর্ঘদিন কারাগাওে থাকার পর আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পায় আক্তার। বাড়িতে এসেই ছেলে জুবায়েরকে নিয়ে আবারও শুরু করে তেল চুরি। সম্প্রতি তার আস্তানায় অভিযান চালায় কাঁচপুর পুলিশ।
এ সময় বিপুল পরিমাণ চোরাই তেলসহ তার সহযোগী সাইফুলকে আটক করা হয়। তারপরও থেমে নেই আক্তার ও তার ছেলের চোরাই তেলের ব্যবসা।
এলাকাবাসী জানান, বন্দরের উত্তর লক্ষণখোলা এলাকার ইমান সর্দার ওরফে ইমান ডাকাতের ছেলে আক্তার ঢাকেশ্বরী স্কুল খেয়াঘাটে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। ৪/৫ বছর আগে খেয়াঘাটে নৌকা বাওয়া ছেড়ে চোরাই তেলের ব্যবসা শুরু করে আক্তার মাঝি। রাত ৩ টার পর শীতলক্ষ্যা নদীতে পুলিশের নিয়মিত টহল উঠে গেলেই শুরু হয় আক্তারের তেল চুরি।
ভোর ৬ টা পর্যন্ত পদ্মা ডিপোতে খালাসে আসা ট্যাংকার থেকে নামানো হয় জ্বালানী তেল। এরপর চলে বিক্রি। এভাবে চোরাই তেল বিক্রি করে আক্তার রাতারাতি বনে যায় কোটিপতি। সূত্র জানায়, তিনি শুধু চোরাই তেলের ব্যবসাই করেননা। তার কাছে আসে জাহাজে করে আসে ইয়াবার চালান।
তিনি চড়া দামে স্থানীয় ডিলারের কাছে তা বিলি বন্টন করেন। চোরাই তেল আর ইয়াবা ব্যবসা করে বানিয়েছেন অঢেল ধন সম্পদ। সম্প্রতি তিনি ঢাকেশ্বরী নাসিং গেইট এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি কিনেছেন।বন্দরের বনগন এলাকায় বাড়ি কিনে সেখানে গোডাউন নির্মাণ করেছেন।
কড়ই তলায় কিনেছেন ৩টি বাড়ি। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। সম্প্রতি লক্ষণখোলার শাহীনের কাছ থেকে কিনেছেন আরেকটি বাড়ি।
এলাকাবাসী জানান, চোরাই তেল ও ইয়াবার ব্যবসা করে আক্তার ও তার ছেলে জুবায়ের এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। এলাকাবাসী আরও জানান তার বাপদাদার পেশা ছিল ডাকাতি। তার দাদা ছিল একজন নামকরা ডাকাত এবং আন্ত:জেলা ডাকাত সর্দার । তার বাবা ইমান সর্দারও ডাকাত সর্দার হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ইমান সর্দার ডাকাতি দায়ে ২০ বছর কারাগারে ছিলেন।