সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানাকে গুম করে ৬ মাস আটক রাখার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী।
আজ বুধবার ভিকটিম নিজেই এ মামলার আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী শুনানি শেষে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার মুদি দোকানদার আবু সায়েদ (৪৫) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জনৈক ব্যবসায়ী এস এম আমীর হামজা (শাতিল)। সেই মামলাটিও ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী মোহাম্মদপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
গুমের মামলায় অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও সাবেক র্যাব ডিজি বেনজির আহমেদ। এছাড়া মামলায় র্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যকে আসামি করেছেন বাদী।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বন্ধু আশরাফুল ইসলাম রিংকুর সঙ্গে উত্তরার ৫ নং সেক্টরের ১ নং রোডে স্মাইর গ্যালারির সামনে অবস্থান করছিলেন। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার দিকে একজন হাতে স্মার্টডিভাইসসহ এসে পরিচয় জানতে চান। তিনি পরিচয় দেন। পরে তাদের দুইজনকে জরুরি কথা আছে বলে একটি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। বাদী গাড়িতে র্যাবের পোশাক পরিহিত দুইজনকে এবং সিভিলে আরও ১০/১১ জন বন্দুকধারীকে দেখতে পান। গাড়ি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চোখ বেঁধে ফেলা হয়। হাতে হ্যান্ডকাপ পড়ানো হয়। সোহেল রানাকে গাড়িতেই বৈদ্যুতিক শক দিতে থাকে। চিৎকার যেন বাইরে না যায় এজন্য উচ্চ ভলিউমে ডিজে টাইপের গান চালিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর রিংকুকে অজ্ঞাত স্থানে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া।
ঘণ্টাখানেক পর সোহেল রানা বুঝতে পারেন তাকে কোনো এক বিল্ডিংয়ের আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে গেছে। এ সময় তারা খালেদা জিয়াকে নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। সেখানে গিয়েও তাকে বিদ্যুতের শক দিতে থাকে। দুই ঘণ্টা পর ৩/৪ জন এসে তাকে ঝুলিয়ে মারতে থাকে। এতে জ্ঞান হারান তিনি। জ্ঞান ফিরলে তাকে আবার নির্যাতন করা হয়। তার নির্দেশে নির্বাচন কমিশনে আগুন দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চান। তাকে আবারও শক দেওয়া হয় এবং মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এভাবে তার ওপর নির্যাতন করা হয়। তাকে নামাজ পড়তেও বাঁধা দেওয়া হতো। পিঠমোড়া দিয়ে হাতকরা অবস্থায় তাকে বেঁধে রাখা হতো।
মামলায় বলা হয়, ওই বছর ৬ জুন ৭ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টার দূরত্বে তাকেসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর ১৩ আগস্ট ভোর ৩ থেকে ৪টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তখনো তার হাত ও চোখ বাঁধা ছিল। পরে তিনি লোকজনের কাছে জানতে পারেন- তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়িতে আছেন।